বেদবাণী তৃতীয় খণ্ড: শ্রীশ্রীরামঠাকুর
ভূমিকা
শ্রীশ্রীরামঠাকুরের লেখা বেদবাণী মূলত তাঁর ভক্তদের উদ্দেশ্যে লেখা পত্রের সংকলন। এই পত্রগুলিতে তিনি আধ্যাত্মিক পথের দিশা দিয়েছেন, জীবনের নানা সমস্যার সমাধান দিয়েছেন এবং মনকে শান্ত রাখার উপায় বাতলে দিয়েছেন। তাঁর গভীর জ্ঞান এবং সরল ভাষায় লেখা এই বাণীগুলি আজও বহু মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস।
পত্রাংশ নং - ১১৮
"কোন চিন্তা করিবেন না। সর্ব্বদা ভগবৎ অধীন হইয়া থাকিতে চেষ্টা রাখিবেন। সংসার মায়াময়, প্রারব্ধ ভোগের অন্ত হইলেই শান্তি হয়। প্রারব্ধ ভোগের জন্য বিচলন হইতে নাই।"
মূল বক্তব্যের ব্যাখ্যা
এই সংক্ষিপ্ত কিন্তু গভীর বাণীটির মধ্যে শ্রীশ্রীরামঠাকুর আমাদের জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সত্যের কথা বলেছেন:
১. কোনো চিন্তা করবেন না, ভগবানের ওপর ভরসা রাখুন: আমাদের জীবনের অধিকাংশ কষ্টই আসে অতিরিক্ত চিন্তা থেকে। ঠাকুর বলছেন, এই অতিরিক্ত চিন্তা ত্যাগ করে নিজেকে সর্বদা ঈশ্বরের হাতে সঁপে দিতে। যখন আমরা বিশ্বাস করি যে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ ঈশ্বরের হাতে, তখন আমাদের মন শান্ত হয় এবং ভয় দূর হয়।
২. সংসার মায়াময়: আমাদের চারপাশের জগৎ, যা আমরা দেখি এবং অনুভব করি, তা এক ধরনের মায়া। এই মায়ার কারণে আমরা সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি, জন্ম-মৃত্যুর চক্রে বাঁধা পড়ি। এই মায়া ত্যাগ করতে পারলেই আমরা প্রকৃত শান্তি খুঁজে পাই।
৩. প্রারব্ধ ভোগ: আমাদের পূর্বজন্মের কর্মের ফলস্বরূপ এই জন্মে যেটুকু ভোগ বা কষ্ট আমাদের জন্য নির্ধারিত, তাকেই প্রারব্ধ ভোগ বলা হয়। ঠাকুর বলছেন, এই প্রারব্ধ ভোগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রকৃত শান্তি পাওয়া সম্ভব নয়। তাই এই ভোগকে শান্ত মনে মেনে নিতে হবে।
এই বাণীর মূল কথা হলো, জীবনের চড়াই-উতরাইকে শান্তভাবে মেনে নিয়ে ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা। প্রারব্ধ ভোগকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না, কিন্তু তার জন্য বিচলিত না হয়ে ধৈর্য ধরে তা অতিক্রম করাই জীবনের আসল শিক্ষা।
সমাপ্তি
এই বাণীটি আমাদের শেখায় যে, জীবনের কঠিন সময়ে হতাশ না হয়ে বরং ভগবানের ওপর আস্থা রাখলে এবং নিজের প্রারব্ধ কর্মফলকে মেনে নিলে মন শান্ত হয়। এর মধ্য দিয়েই আমরা প্রকৃত শান্তির দিকে এগিয়ে যেতে পারি।
বেদবাণীর এই ধরনের আরও গভীর আলোচনা পেতে আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন। আপনার কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে জানাতে পারেন।
No comments: