শ্রীশ্রীরামঠাকুরের বাণী: নামসাধনার গুরুত্ব ও মায়ার মোহমুক্তি"


শ্রীশ্রীরামঠাকুরের বাণী: নামসাধনার গুরুত্ব ও মায়ার মোহমুক্তি"

(বেদবাণী ৩/১৮৫)

🌷
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
মনেতে যাহা ভাল লাগে তাহা সর্ব্বৈব বিভূতি, মন হইতে উৎপন্ন সৃষ্টি প্রকাশ হইয়া সীমাবদ্ধ হইয়া বহুপ্রকার তরঙ্গের আবরণে পড়িয়া থাকে বলিয়াই ঋষিগণ ইহাকে মনের সঞ্চারিত বিপদ বুদ্ধিতে মায়া (ভ্রান্তি) বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়া থাকেন-
মনঃ করোতি পাপানি
মনো লিপ‌্যতে পাতকৈঃ;
অতএব মনের সুখের জন‌্য যাহা কিছু অনুষ্ঠান করেন তাহা সকলই অভাব জানিয়া ঋষিগণ সত‌্যকে ত‌্যাগ করিতে পারে না।
ভগবান নিত‌্য, শ্বাশ্বত, পুরাণ, আদি, অনাদি প্রভৃতি উপাক্ষং ঋষিগণ হইতেই প্রকট হইয়া থাকে। এই সকলই একমাত্র নাম। ভগবান নামরূপ, এই নামের অনুশীলনকে ভক্তি, নামে জাগ্রত থাকাকে ভক্তিরূপ বলে। এই নাম ভিন্ন জগতের ত্রাণে প্রাপ্ত আর কিছুই নাই। এই জ্ঞানকেই নাম সংকীর্ত্তন বলে। এই অবস্থাই নিত‌্যান্দ বলিয়া জানিতে হয়। এই ভাবের অবতীর্ণতাকে অদ্বৈত আচার বলিয়া জানিবেন। এই নাম ছাড়া অন‌্য কোন শাসনে, প্রলোভনে, উৎপাতেও নাম ত‌্যাগ করিবেন না। ইহাই শক্তি বলিয়া জানিবেন। এই নামের যে আশ্রয় সেই অবস্থাকে শ্রীসম্পদ বলিয়া থাকে। ঐশ্বর্য‌্য অর্থাৎ ভগবান ষড়ৈশ্বর্য‌্যময় বলিয়া থাকে। সেই ঈশ্বর স্বরূপ অর্থ প্রকাশ হয়। ইতি নাম প্রকাশ ইহাকে বেদ বলিয়া থাকে। এই বেদের আশ্রয় নিলেই জানা যায়, ইহাকেই মন্ত্র বলে। এই বেদরূপ ভগবান। এই নামের সঙ্গে সর্ব্বদা থাকিতে থাকিতে অবতার শক্তি সমভাব প্রকট হয়। ইহাই অবতার শক্তি।
এই শক্তিকে সামর্থ‌্য বলে। ইহার নামের বিস্তীর্ণ অবস্থাই চৈতন‌্য (রূপ)। এই নামের প্রকাশ শক্তিই নিত‌্যানন্দ বলিয়া জানা হয়। নামই সত‌্য, সত‌্যই ধ‌্যান (চিন্তা), ধ‌্যানই ভগবান অর্থাৎ ধীর বলিয়া জানিতে হয়।
অচ‌্যুতং কেশবং বিষ্ণুং, হরি সত‌্যম জনার্দ্দনম।
হংসং নারায়ণঞ্চৈব এতন্নামাষ্টকম শুভম।।
(শিব) মঙ্গল কল‌্যাণ সদানন্দ পর্য‌্যায়ক্রমে বুদ্ধিযুক্ত বিশেষ হইয়া থাকে।
এক বই দ্বিতীয় নাই। "হংসঃ"ই
বেদ অর্থাৎ ভগবানকে জানে। ভগবৎ জানিলেই ভগবানের শরণ লয়। ভগবৎ শরণ লইলেই ভগবৎপদে আত্ম নিবেদন করিয়া কর্ত্তৃত্ব যোগ বিয়োগ হইয়া ভগবৎ দাস হয়। ভগবানের দাস হইলেই স্বভাব পায়, অর্থাৎ স্বরূপ প্রকাশ হয়। বিরূপ অবস্থা থাকে না। ভগবানই সত‌্য বলিয়া জানিতে পারিলে সকল অবস্থায় ভগবান ভিন্ন অন‌্য কিছু গোচরে আসিতে পারে না। যাহাদ্বারা মোহকারী ভ্রমপূর্ণ মায়া সকল উদ্ধার হইয়া সকলই অগণ‌্য হইয়া এক ব্রজরাজের সেবা পাইয়া পরম পবিত্র প্রেমরস ভোগ পায়। ইহার উৎপন্ন ভাবকেই কৃষ্ণমূর্ত্তি, মুরলীবদন, বংশীধারী রাধাকৃষ্ণ প্রভৃতি আখ‌্যা বেদের প্রকট হইয়া যায়। এই "হংসঃ" হইতেই সর্ব্বপ্রকাশ ভগবান জানে।
যো মাং পশ‌্যতি সর্ব্বত্র সর্ব্বঞ্চ ময়ি পশ‌্যতি।
তস‌্যাহং ন প্রণশ‌্যামি স চ মে ন প্রণশ‌্যতি।।
সর্ব্বদা সকল অবস্থাতে নামের চিন্তার নামকে জ্ঞান বলে। অভ‌্যাস করিতে করিতে নামের জ্ঞান জন্মে। জ্ঞানের ধ‌্যান আসে, অর্থাৎ নামের উদয় হয়। নামের উদয় হইলে বুদ্ধি অন‌্যত্র যায় না। তখন যে অবস্থা তাকে প্রাপ্ত বলে। প্রাপ্ত হইলে পর সকল অভাব যায়। যেমন কচি, ডাসা, পাকা রসাল হইয়া থাকে। সেইরূপ দেহমুক্ত লাভ হয়। এই অবস্থাকেই ব্রজ প্রাপ্ত বলে।
শয়নে, স্বপনে, ভোজনে, দানে সকল কর্ম্মানুষ্ঠানে, সকল অবস্থায়ই এই নাম করিতে করিতে নাম জাগিয়া উঠে। নাম ছাড়িবেন না। যাহা যাহা ভাল লাগে তাহা সকলই প্রলোভন, মায়ামৃগ, মরুভূমির ভ্রম মাত্র জানিবেন। সর্ব্বতোভাবে ভগবান সর্ব্বশক্তিরূপ জানিবেন। এই বই আর কিছুই নাই।
🕉 জয়রাম🕉

শ্রীশ্রীরামঠাকুরের এই বাণী অত্যন্ত গভীর এবং গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় দর্শনের প্রতিফলন। নিচে বাণীর মূল বিষয়বস্তু পয়েন্টে বিভক্ত করে ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:


১. মন এবং তার প্রকৃতি:

  • মনের সৃষ্টিতে সীমাবদ্ধতা:
    মন যা সৃষ্টি করে, তা সীমাবদ্ধ এবং বহুপ্রকারের আবরণে ঢাকা থাকে। এটি একপ্রকার ভ্রান্তি বা মায়া।
    ঋষিদের মতামত: মনের সুখ বা চাহিদা পূরণের জন্য যা কিছু করা হয়, তা অভাবেরই প্রকাশ।
    শ্লোক:






শ্রীশ্রীরামঠাকুরের বাণী: নামসাধনার গুরুত্ব ও মায়ার মোহমুক্তি" শ্রীশ্রীরামঠাকুরের বাণী: নামসাধনার গুরুত্ব ও মায়ার মোহমুক্তি" Reviewed by srisriramthakurfbpage on November 17, 2024 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.